নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | প্রিন্ট | 121 বার পঠিত
রাষ্ট্রায়ত্ব ন্যাশনাল টি কোম্পানিতে (এনটিসি) অনিয়ম-দুর্নীতি আর লুটপাটের মহোৎসব যেনো থামছেই না। সম্প্রতি কোম্পানির ১২ টি বাগানের কাঁচা চা পাতা বিক্রির প্রায় ৪৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এসবের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন কোম্পানির ভারপ্রাপ্ত এমডি সৈয়দ মাহমুদ হাসান, সিএফও কেরামত আলী গং।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ন্যাশনাল টি কোম্পানি কৃষি ব্যাংকের চা উৎপাদন ঋণে কোম্পানি পরিচালিত হয়। চা বা অন্যান্য বিক্রির সমুদয় অর্থ কৃষি ব্যাংকের লোন অ্যাকাউন্টে জমা হওয়ার কথা। প্রায় সাড়ে তিনশ’ কোটি টাকার ঋণ অনাদায়ী রেখে কৃষি ব্যাংকের অনুমতি না নিয়ে এবং কোম্পানির ৬৭৪ নং বোর্ড সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত পাশ কাটিয়ে এনটিসির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কাঁচা চা পাতা বিক্রির চুক্তি করে। যে তথ্য জানেনা কৃষি ব্যাংক এবং পরিচালনা পর্ষদ। উল্লেখ্য প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতা ২৫ টাকা ৫০ পয়সা দরে বিক্রির জন্য সিনথিয়া টি কোম্পানির সঙ্গে গত ১৮ জুলাই চুক্তি করে ন্যাশনাল টি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। চুক্তিপত্রে বিধিবহির্ভূত যে শর্তগুলো যুক্ত করা হয়েছে এতে কোম্পানি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। এ ব্যাপারে কৃষি ব্যাংক পদক্ষেপ নিলে ফেঁসে যেতে পারে অনেক রাঘববোয়াল। বোর্ডের নির্দেশনায় নগদে বিল পরিশোধের কথা বলা না থাকলেও চুক্তিপত্রে তা যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া বোর্ডের সিদ্ধান্তে পরীক্ষামূলকভাবে এক মাসের কথা বলা হলেও চুক্তি করা হয় ছয় মাসের জন্য।
উল্লেখ্য, কাঁচা চা পাতা বিক্রির সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় বিনা টেন্ডারে।
সালমান তালিবের সাথে সম্পাদিত অসম ও অবৈধ এই চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন, কোম্পানির ভারপ্রাপ্ত এমডি সৈয়দ মাহমুদ হাসান, সিএফও কেরামত আলী এবং কোম্পানি সচিব মোল্লা গোলাম মোহাম্মদ।
উল্লেখ্য, ক্রয়কারী সিনথিয়া টি কোম্পানির মালিক সালমান তালিব সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকটাত্মীয়। সেই প্রভাব খাটিয়ে সালমান তালিব ১ লাখ ৮ হাজার কেজি কাঁচা চা কিনে নিলেও তার মূল্য বাবদ ২৭ লাখ ৭২ হাজার ২৫২ টাকা পরিশোধ করেননি। এমনকি তিনি জামানত হিসেবে ব্যাংক গ্যারান্টির ১৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা অদ্যাবধি প্রদান করেননি। অথচ চুক্তিপত্রের ১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রতি সপ্তাহে কাঁচা চা পাতা গ্রহণের পূর্বেই পূর্ববর্তী সপ্তাহে গৃহীত চা পাতার মূল্য চা বাগান কর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করতে হবে।
জানা যায় বোর্ডের সিদ্ধান্ত অমান্য করে অসৎ উদ্দেশ্যে নগদ টাকা লেনদেনের শর্তযুক্ত করে পরস্পর যোগসাজসে অর্থ হাতিয়ে নেয়াই ছিল মুল উদ্দেশ্য।
মূল্য গ্রহণ ছাড়াই কাঁচা চা পাতা বিক্রির এক পর্যায়ে বিষয়টি জানাজানি হলে, ভারপ্রাপ্ত এমডি সৈয়দ মাহমুদ হাসান ক্রেতা সালমান তালিবকে গত ১৮ আগস্ট একটি চিঠি দিয়ে বকেয়া ও ব্যাংক গ্যারান্টির অর্থ বাবদ ৪৩ লাখ টাকা পরিশোধের তাগিদ দেন।
জানা যায় বিষয়টি সিএফও কেরামত আলী বোর্ডকে অবহিত না করে পাতা বিক্রির অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিষয়টি জানাজানি হলে তিনি তরিঘড়ি করে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন।
সম্প্রতি পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এবং ৫ জন পরিচালকের পদত্যাগের পর লুটপাটের ঘটনা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উল্লেখিত পরিমাণের চেয়ে বহুগুণ কাঁচা চা পাতা বাগান থেকে পাচার করা হয়েছে।
এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, নগদ টাকা লেনদেনের সুযোগ থাকায় চক্রটি মানিলন্ডারিংয়ের অপরাধ সংঘটিত করছে। তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইউ’র হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
শেয়ারহোল্ডাররা এই ৩ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ গ্রহণ করারও দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য ন্যাশনাল টি কোম্পানির পরিচালক শাকিল রিজভীকে ফোন করা হলে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, সালমান তালিবের সাথে চুক্তি সম্পাদনের বিষয়টি তিনি জানেন না। তিনি বলেন, কৃষি ব্যাংকের অনুমোদন সাপেক্ষে পর্ষদ এক মাসের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে কাঁচা চা পাতা বিক্রির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নির্দেশনা প্রদান করেছিল।
ভারপ্রাপ্ত এমডি সৈয়দ মাহমুদ হাসানকে ফোন করে বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে তিনি কোন প্রশ্নেরই সদুত্তর দিতে পারেননি। সব প্রসঙ্গই তিনি এড়িয়ে যান। কাঁচা চা পাতা বিক্রির বিষয়টি তিনি কৃষি ব্যাংককে অবহিত করেননি বলে স্বীকার করেন। তিনি সম্পাদিত চুক্তির শর্তসমূহ এবং কাঁচা চা পাতা বিক্রির ও ব্যাংক গ্যারান্টির অর্থ না পাওয়ার বিষয়টি পরিচালকদের অবহিত করেননি বলে জানান।
Posted ১১:২১ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
bankbimaarthonity.com | rina sristy